ব্লগ পোস্টের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় টিপস
ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিশাল দুনিয়ায় কন্টেন্ট হলো প্রাণ স্বরূপ। কন্টেন্ট ছাড়া একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট মূল্যহীন। কিন্তু আপনার কন্টেন্ট তখনই কার্যকর ভূমিকা রাখবে যখন আপনি একটি তথ্যবহুল কন্টেন্ট লিখতে পারবেন। আবার শুধু মাত্র তথ্য থাকলেই চলবে না। কন্টেন্টটিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে পাঠককে আকৃষ্ট করে রাখতে হবে যেন পাঠকগণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আগ্রহ নিয়ে পুরো লেখাটি পড়তে পারে।
ব্লগটি মার্কেটিং এর কোন অবস্থানে আছে সেটা কিভাবে বুঝবেন?
আপনি যে ব্লগটি লিখেছেন সেটি সম্পন্ন করার পর আপনার একটি বিশেষ আগ্রহ জাগবে যে আপনার ব্লগটি কোন অবস্থানে আছে তা জানার। তাই ব্লগটি ভালো হয়েছে নাকি খারাপ হয়েছে সেটা বোঝার একটি ভালো উপায় হলো, ব্লগটিতে ভিজিটররা কেমন আসছে বা পেজ ভিউ কেমন হচ্ছে সেটা দেখা। সত্যিই এটি একটি খুব ভাল নির্দেশক কন্টেন্টটির অবস্থান জানার। তবে সবসময় পেজভিউ দেখে আপনি নিশ্চিন্ত হতে পারবেননা। যেহেতু আপনি আপনার ব্যবসার জন্য একটি ব্লগ পোস্ট চালাচ্ছেন তাই আপনার বেশিরভাগ বিনিয়োগ শুধুমাত্র ব্লগ পোস্টের পিছনে খরচ করা ঠিক হবে না।
যখন আপনি ব্যক্তিগত ব্লগ চালাবেন
এমন যদি হয় যে আপনি একটি ব্যক্তিগত ব্লগ খুলে রেখেছেন শুধুমাত্র মজা করার জন্য। কিন্তু সে ব্লগটি থেকে যদি আপনার কিছু অতিরিক্ত আয় আসে তাহলে নিশ্চয়ই আপনি বিরক্ত হবেন না? কিছু মানুষ আছেন যারা ব্যক্তিগত ব্লগে ব্যানার, বিজ্ঞাপন এবং স্পনন্সরদের পোস্ট থেকে আয় করেন।আবার অনেকই ব্লগিং করে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে, কর্মশালা, পরামর্শ ইত্যাদি দিয়ে আয় করে। তাই আপনার ব্লগটি যত ছোটই হোকনা কেন আপনি এর জন্য বড় স্বপ্ন দেখতেই পারেন।
ব্লগের রিডাররা কি আপনার লেখার প্রতি আকৃষ্ট?
আপনার ব্লগটি ব্যক্তিগত অথবা ব্যবসায়িক যে উদ্দেশ্যেই তৈরি করে থাকেন না কেন খেয়াল রাখবেন, রিডাররা আপনার পোস্টটি পড়ছে কিনা, কমেন্ট করছে কিনা এবং পরবর্তী পেজে ক্লিক করছে কিনা। এই বিষয়গুলো বুঝতে পারলেই আপনি বুঝবেন যে রিডাররা আপনার লেখার প্রতি আকৃষ্ট। তাই পাঠক বা রিডারকে আকৃষ্ট করার জন্য লেখাগুলো সুবিন্যস্ত থাকা জরুরি।
একটি সুন্দর ব্লগ ডিজাইন রিডারদেরকে কাস্টমার হতে উদ্বুদ্ধ করে
একটি তথ্যবহুল এবং বিন্যাস্ত কন্টেন্ট রিডারকে আকৃষ্ট করে। তাই আপনি কন্টেন্টেকে যেমন সুন্দর করতে সচেষ্ট থাকেন, ঠিক একই ভাবে মার্কেটিং এর অন্যান্য কৌশলগুলোর দিকেও আপনাকে সমান দৃষ্টি রাখতে হবে। যেমন একটি রাজ্য পরিচালনা করার জন্য একজন রাজার রাজত্বে দক্ষ উপদেষ্টা এবং শক্তিশালী সেনা বাহিনী থাকে।
SEO এর সাহায্যে আপনি নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড দিয়ে আপনার ওয়েবসাইটটিকে রেঙ্ক করাতে পারবেন এবং সেটা ভালো ট্রাফিক এনে দেয়। রিডারদেরকে কাস্টমার হতে উদ্বুদ্ধ করে।
এখন একটি ব্লগ পোস্টের আরো কিছু গুরুত্তপুর্ন বিষয় তুলে ধরছিঃ
হেডলাইন বা শিরোনাম
ধরুন, আপনি খবরের কাগজ কিনতে গেছেন। স্বভাবতই দেখবেন যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবরটি প্রায় সব কাগজেই এসেছে। এখন আপনি কোন কাগজটা বেছে নিবেন? নিশ্চয়ই যে খবরের কাগজে শিরোনামটি আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেটি? তেমনি আপনি ব্লগে আপনার লেখাটির শিরোনাম বা হেডলাইন দিয়ে রিডার কে আকৃষ্ট করতে পারেন। শিরোনামটি এমন ভাবে তৈরি করুন যেন পাঠক আপনার পেজের ‘’Read more’’বা ’’বিস্তারিত পড়ুন’’ এ ক্লিক করতে আগ্রহী হয়। অর্থাৎ সে পরবর্তী পেজটি পড়ে।
বাইলাইন এবং ডেট
কন্টেন্ট মার্কেটিং কে জোরালো ভাবে উপস্থাপন করার জন্য আপনার নাম এবং ছবি কন্টেন্টের বাইলাইনে সংযুক্ত করে দিতে পারেন।
আপনার কন্টেন্টটি কখন আপডেট করেছেন সেই ডেটটি কন্টেন্টের নিচের দিকে দিয়ে দিবেন। যেমন, যদি এমন হয় যে আপনি কন্টেন্টটি ২০১৩ সালে লিখেছিলেন কিন্তু সেটি আবার ২০১৫ সালে আপডেট করেছেন। তাহলে আপনি শেষ যখন আপডেট করেছেন সেই তারিখটিই দিবেন।
ব্যানার
একটি ব্লগে ব্যনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ আমাদের মস্তিষ্কে ৯০% দৃশ্যমান তথ্য রয়েছে এবং আমাদের চোখ সে দৃশ্যমান তথ্যগুলো আমাদের পঠিত তথ্যর চেয়ে ৬০০০০X দ্রুততার সাথে মস্তিস্কে প্রেরণ করে। আবার ফেসবুকে পোস্টের চেয়ে ছবির প্রতি দ্রুত দৃষ্টি যায়। তাই আপনাকে এমন একটি ব্যানার তৈরি করতে হবে যেটা শুধু আপনার হেডলাইন বা শিরোনামকেই সাপোর্ট করবে না সেই সাথে আপনার কাঙ্ক্ষিত পাঠককে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিট করতেও আগ্রহী করে তুলবে।
কন্টেন্ট
কন্টেন্টটি ছোট কোন গল্প অথবা মজার কাহিনী দিয়ে শুরু করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে গল্পটি যেন কন্টেন্ট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। এছাড়াও পাঠককে ছোট প্রশ্ন করে লেখা শুরু করতে পারেন। শুরুটা এমন হওয়া চাই যেন পাঠকরা আপনি কি বলতে চাচ্ছেন তা জানার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠে।
লেখার মাঝে বিরতি দিন
ব্লগপোস্টে মাঝে মাঝে বিরতি দেয়া জরুরি। কারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা দীর্ঘ লেখা বা পোস্ট বেশি সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়তে চায় না।তাই বড় প্যারা দিয়ে কোন লেখা না লিখাই ভালো। ছোট ছোট প্যারা, উপ-শিরোনাম, মূল পয়েন্ট, ছবি এবং ভিডিও ক্লিপ্স ইত্যাদি যুক্ত করে লেখার মাঝে বিরতি দিয়ে লিখতে হবে।
CTA ব্যানার তৈরি করুন
আপনি যখন আপনার রিডারদেরকে পোস্টের নিচের দিকে আনতে সফল হবেন তখন সে আপনার CTA ব্যানারটি দেখবে। তাই ব্যানারটি তৈরি করার সময় আপনার সার্ভিস পেজ, কন্টাক্ট পেজ, ফ্রি অফার ইত্যাদি উল্লেখ করবেন।
লেখকের নাম ঠিকানা সংযুক্ত করুন
পোস্টের লেখকের নাম, ঠিকানা, ছবি এবং টুইটার আইডি বাইলাইনে দিয়ে রাখতে পারেন। লেখকের নিজের সম্পর্কে ধারনা দিতে পারেন এবং সেই সাথে আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ঠিকানাও দিতে পারেন।
কমেন্টস
ব্লগে পাঠকদের কমেন্টস খুব গুরুত্বপূর্ণ। কমেন্টের মাধ্যমে আপনি পাঠকদের মতামত সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন। তাই পাঠকদের কমেন্টের উত্তর সঠিক ভাবে দেয়ার চেষ্টা করবেন। Quick support নামে একটি অপশন রাখতে পারেন। যেখান থেকে আপনি পাঠকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন।
শেয়ার অপশন
ব্লগ পোস্টে একটি শেয়ার অপশন রাখতে পারেন। যেন পাঠকরা আপনার ওয়েবসাইট থেকে পোস্টটি তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লিঙ্ক যুক্ত করুন
যেহেতু আপনি চাইছেন, পাঠক আপনার ওয়েবসাইটে বেশি সময় ধরে থাকুক তাই আপনি আপনার সামাজিক যোগাযোগের লিঙ্কগুলো সংযুক্ত করে রাখুন। যেন পাঠকরা আপনার পরবর্তী পোস্ট এবং অফার সম্পর্কে জানতে পারে।
টপ আর্টিকেলের লিঙ্ক সংযুক্ত করুন
আপনার পোস্টের মত যে টপ পোষ্টগুলো রয়েছে সেগুলোর লিঙ্ক যুক্ত করুন। এতে করে পাঠকরা বিষয়টির বিস্তারিত বিবরণ জানতে পারবে এবং আপনার ওয়েবসাইটে বেশি সময় ধরে থাকবে।
ব্লগ পেজের উপরের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন বার যুক্ত করুন
আপনার পেজের উপরের দিকে সুন্দর এবং আকর্ষণীয় একটি বার তৈরি করতে পারেন। যেমন, কল টু অ্যাকশন বার, এটেনশন গ্রেবার ইত্যাদি।
প্রস্থান পপ আপ
পপ আপ একটি অবাক করা জিনিস। আপনি যখন কোন ওয়েবসাইট থেকে বের হয়ে আসতে চাইবেন তখনি পপ আপ গুলো প্রদর্শিত হবে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে এই পপ আপ পাঠকদের এক ধরনের আকর্ষণ করে। তাই আপনার ব্লগে পপ আপ সংযুক্ত করুন।
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোকে কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর আর কার্যকরী ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলুন এবং সহজেই ডিজিটাল মার্কেটিং দুনিয়ায় পদার্পণ করুন।