ইগো ইজ দ্যা এনিমি।
এই বইটির লেখক রায়ানের কথা জানতাম। সে তার হাতে এই কথাটাই ট্যাটু একেছিলো।
আর আমি যে ক্লায়েন্ট ম্যানেজারের কথা বলছি তার নাম হচ্ছে জেশন।
সে একটা কনটেণ্ট রাইটিং এজেন্সির সিনিয়র ক্লায়েন্ট ম্যানেজার। প্রায় বছর খানেক আগে আমি তাদের কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করছিলাম।
এর পর এই জেশন প্রতিমাসেই ফোন করতো। যথারীতি আমি বলতাম আমার প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করবো। রাইটার একসেসে আমি যে সেটআপ করে নিয়েছি তাতে আমার অফিসে যারা ইন্টার্ন করে তারাই এখন হ্যান্ডল করতে পারে। তাই অন্য কোম্পানীতে আমার সুইচ করতে ইচ্ছা হচ্ছিলো না।
তবে মাঝে মাঝে আবার বিভিন্ন কোম্পানী ট্রাই করি। একই সাথে কনটেণ্ট ডিভেলপমেন্ট প্রো আর জেসনদের করপ রাইটিংয়ে দুইটা প্রজেক্ট শুরু করলমা। দুই কোম্পানীই যথেস্ট হতাশ করছে।
জেসনের কথা বলি। সে সেলসে আছে। সেলসের কাজই হলো ফোন কল দেয়া, মেইল করা ইত্যাদি। তবে জেসনের কেইসটা একটু ভিন্ন মনে হলো। বলা যায় সে লেগে থাকার কারনেই আমি তার কোম্পানীতে অর্ডার করছিলাম।
তারা যে লেখাটা প্রথম রিভিশন ফুললি রিজেক্ট। আমার দরকার কপি রাইটিং। সে ডেলিভারি যা দিছে তা বলা যায় ব্লগ পোস্টের কাছে কাছি। আমি স্ট্রেইট বললাম সরি এটা একসেপ্ট করা যাবে না। তুমি কি কোন কপি রাইটারকে দিবা কাজটা। দেন সে সাথে সাথে ফোন করলো। অনেক এপোলজি চাইলো। বলার ভঙ্গিমাই যা তাতে আসলে কিছু বলার থাকলো না।
সেই প্রবলেম শুনলো। তারপর আবার দুইটা ভার্সন পাঠালো। দুই রাইটার দুইটা ভার্সন লিখেছে। এবারও হলো না যা চাচ্ছিলাম তা।
আমার আর ইচ্ছা হলো না যে তাকে আবার ঠিক করতে বলি। আমি বুঝেছি যে তাদের এতো বুঝিয়ে আজ করা খুবই কঠিন। সে মেইল করলো, ফোন করলো। আমি তাকে জানিয়েছি যে তোমার রাইটারদের যে লেখা তা আমি ইউজ করতে পারবো না।
সো তোমার কোম্পানী আমি আপতত ইউজ করবো না। সে আবার ফোন করলো। আমি ধরি নাই। মেইল করলো।
আবার ফোন করলো। আবার ইমেইল করলো। আমি উত্তর দিছি যে দেখ আমার তোমাদের বুঝাতে অনেক সমস্যা হচ্ছে আর আমি এই রিভিশন আপটার রিভিশন লাইক করছি না। এটা সময় নস্ট করে।
আমার দরকার এমন কাউকে যে আমার কাজ থেকে হিন্টস নিয়ে কাজ করতে পারবে।
আমার মনে হয় তোমাদের সাথে সেটা হচ্ছে না। তাই আমি অন্য কোম্পানী ইউজ করছি।
এরি মধ্যে আমি এলেক্সের সাথে যোগাযোগ করি। সে সেলস ফানেল এক্সপার্ট। এলেক্স তার কপি রাইটার অবরেনের সাথে কথা বলতে বললো। অবরেনের সাথে আমি আগে কাজ করেছি। সো কথা বলে ফাইনাল করেই ফেলেছি সব।
জেসন কাল আবার ফোন করলো। মজার পার্টটা এখানেই। আমি কিন্তু তাকে খুব স্পস্ট ভাবেই বার বার বলেছি যে আমি তার কোম্পানী ইউজ করব না এখন। তারপরও সে আমাকে ফোন করলো। তার ইগো কাজ করে নাই।
সে শুরুতেই আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করলো। স্বাভাবিক সে জানে আমিও জিজ্ঞেস করবো কেমন আছো। আমি তাই করলাম। আর এটাই সে হুক হিসাবে ব্যবহার করবে আমার সাথে আলোচনা শুরু করতে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমি ডিসেটিস্ফাইড। তাকে এড়িয়ে চলছি। আমি হয়তো ফোন রেখে দিব এমন সম্ভাবনা ছিলো। বাট সে স্কিলড। সে আমাকে আলোচনা ঢুকিয়ে তারপর বিষয়টা শিথিল করবে।
যেই আমি জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছো। সে বলো আমি খুব হ্যাপি কারন ইংল্যান্ড জিতেছে। আমি বললাম ইংল্যান্ড অনেক স্ট্রং টিম এবার ওয়ার্লকাপ জিতবে হয়তো। খেয়াল করুন সে ইচ্ছাকৃত ক্রিকেটকে বেছে নিছে।
কারন সে জানে ক্রিকেট আমার পছন্দের একটা বিষয়। কমন কিছু চুজ করতে হয়।
সে তাই করলো। এরপর ক্রিকেট নিয়ে অনেক কথা। ইংল্যান্ডের পর গেইলের কারনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তার পছন্দ। তার পর বাংলাদেশ প্রসংগ। শুরু হলো বাংলাদেশ বন্ধনা। এক জন আন হ্যাপি ক্লায়েন্টকে শান্ত করার এর চেয়ে ভালো কিছু আর কি হতে পারে।
আবার বললো আমি এবার ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর বাংলাদেশ সাপোর্টার তাহলে। কথা গুলো ঠিক পর পর এমনি হয় নি। মাঝে অনেক কথা আছে। সে বার বার বলছি তোমার সাথে কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগছে।
তুমি ভালো জানো। তোমার সাইটটা দারুন। তোমার সাথে আমার অনেক মিল আছে। আমার অনেক ভালও লাগছে কথা বলতে।সে আমাকেও অনেক প্রসংশা করলো। এটাও কিন্তু প্লানড। নেগেটিভ কে পজিটিভ করার স্ট্রটেজি।
হিউম্যান সাইকোলজীই এমন যে নিজের গুনগান পছন্দ করা। পছন্দ করা শুরু করলেই নেগেটিভ সেন্টিমেন্ট আস্তে আস্তে কুল ডাউন হবে। এতা সে জানে। আর সেটা সে করেছে খুব সিদ্ধ হস্তে। 🙂
সে প্রায় ৩০ মিনিট কথা বলছে।
আমার যেহেতু সে প্রসংশা করেছে অবচেতন ভাবেই আমিও তার পজিটিভ জিনিশ গুলো খুজে বলতে শুরু করলাম। তুমি অনেক চেস্টা করছে। বার বার যোগাযোগ করেছে। একটা রাইটারে জায়গায় তিনটা রাইটার ইউজ করছো।
আমি এপ্রিশিয়েট করি তোমাকে। কিন্তু আমি আসলেই তোমার রাইটারদের ইউজ করতে পারবো না।
পেয়ে গেলো পরের হুক। এক্সপ্লেইন করা। কেন খারাপ হয়েছে সব। জানালো তার মেইন রাইটার অনুপস্থিত। তাই তাড়াতাড়ি করতে এই রাইটাদের দিয়েছিলো। এই ব্যাখ্যা আপনি যাই বলেন কিছুটা হলেও আগুনে পানি ঢালবেই। 🙂
আমি বাধ্য হলাম তাকে বলতে আচ্ছা আমি নেস্কট কিছু ওর্ডার করবো। সে কয়টা লেখা দরকার সেটা জানতে চাইলো। সে বার বার আগের কাজের জন্য এপোলজি চাইলো। আমি স্পস্টতই প্যাটার্নটা বুঝতে পারছিলাম।
আমি ইচ্ছাকৃতই তার সাথে কথা বলছিলাম এটা শেখার জন্য যে সে যেই বিষয়ে ট্রেনিং নিছে হয়তো কয়েক মাস ধরে সেটার কিছু আমি এখনি শিখে নিবো। শেষ অংশ হলো প্রমিজ আদায় করা।
সে কৌশলে এটা আদায় করে নিয়েছে যে আমি তাকে মেইল করে নেক্সট প্রজেক্টের একটা ব্রিফ পাঠাবো। আমি বার বার বলছিলাম যে ভেকেশানের পর রিকোয়ারমেন্ট জানিয়ে মেইল করবো।
সে জানে তখন এমন ইচ্ছা নাও থাকতে পারে। সে আমাকে দিয়ে পরের কাজের কমিউনিকেশন শুরু করতে পারলেই তার লক্ষ্য কিছুটা অর্জন হয়। একজন ক্লায়েন্ট হারাবে না। একজন আনহ্যাপি ক্লায়েন্টকে আবার সার্ভ করার সুযোগটা সে পাবে।
আমি শেষে না পেরেই বললাম আমি তোমাকে কাল ব্রিফ পাঠাবো।
আমার অপশন অনেক। তার কোম্পানীকে আমি না ইউজ করলে কিছুই হয় না আমার। কিন্তু এই জেসন যে ভাবে ডিল করেছে তাতে আমার চিন্তা পজিটিভ করতেই হলো।
সেই কথাটাই সত্যি যে আমরা কিন্তু আসলে ইমোশনের কারনে কিনি। ক্রেতার ইমোশন প্রোডাক্টের দিকে টার্ন করতে পারলেই সে কিনি। যেমন ড্রেসটা অনেক সুন্দর এই কারনে সে কিনে না। সে তখনি কিনে যখন দোকানদার এটা কনভিন্স করতে পারে যে এই ড্রেসটা তাকে খুব মানাবে। তাকে সুন্দর লাগবে।
আমরা এমন করি কি? করি না বলেই পিছিয়ে আছি।