ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে সেলস বৃদ্ধি করার জন্য এবং টার্গেটেড অডিয়েন্সদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কন্টেন্ট মার্কেটিং একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কন্টেন্ট মার্কেটিং ইউজারদের আকর্ষণ করে এবং একই সাথে আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং প্রসারিত করে।
“কন্টেন্ট মার্কেটিং এক ধরণের কস্ট ইফেক্টিভ টেকনিক” ( সিএমআই) । অর্থাৎ এটি কম সময়ে এবং একইসাথে কম খরচে আপনার মার্কেটকে লিডিং পজিশনে নিয়ে যেতে পারে ( ব্যতিক্রম : ইমেইল মার্কেটিং)।
কিন্তু, আপনি যদি বড় কোনো বিজনেসে ইনভলভড থেকে থাকেন বা যদি কোনো বড় মার্কেটার হন তাহলে একটা ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো, যেই কন্টেন্ট গুলো তৈরি করা হচ্ছে সেগুলো আদৌ কোনো কাজে আসছে কি না। যদি সেটা না হয়, তাহলে আপনি শুধুমাত্র সময় নষ্ট করছেন।
কাজেই আমাদেরকে কন্টেন্ট তৈরির ইফেক্টিভ ফরম্যাটগুলোকে ফিগার আউট করতে হবে।
তাই আমরা কিছু ইফেক্টিভ ফরম্যাটকে এখানে এনলিস্টেড করেছি। লিস্টের ফরম্যাটগুলো আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং প্রসারিত করতে সাহায্য করবে এবং টার্গেটেড অডিয়েন্সদের আকর্ষণ করার জন্য ইফেক্টিভ কন্টেন্ট তৈরিতে কাজে আসবে।
কন্টেন্ট মার্কেটিং এর উপকারিতা :
- কন্টেন্ট মার্কেটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটিং টুল হিসেবে পরিচিত। এটি ইমেইল মার্কেটিং এর একটি অংশ যার হাই আরওআই রয়েছে।
- এসইও সার্চ র্যানকিনের তিনটি ফ্যাক্টরের মধ্যে একটি হল কন্টেন্ট। ইফেক্টিভ কন্টেন্ট ইউজারদের আপনার সাইটের প্রতি আকর্ষিত করার পাশাপাশি সাইটের কাস্টমার সংখ্যাও বাড়িয়ে দেয়।
- কন্টেন্ট আপনার সাইটের ভিজিটর এবং কাস্টমারদেরকে আপনার বিজনেস বিষয়ক যথাযথ তথ্য সরবরাহ করে থাকে। এটি আপনার বিজনেস সাইটকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।
- কন্টেন্ট বিভিন্নভাবে তৈরি করতে হয় যাতে করে এতে বৈচিত্র্য আসে। কেননা সব ইউজারের কাছে একই ধরণের কন্টেন্ট ভিউড হয় না। নিচের লিস্টের কন্টেন্ট ফরম্যাটগুলো বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট তৈরিতে সাহায্য করবে।
১. ব্লগ পোস্ট :
ব্লগ পোস্ট কন্টেন্ট মার্কেটিঙের একটি পপুলার ফরম্যাট। ব্লগ পোস্ট তৈরি করা তুলনামূলকভাবে সহজ, বিশেষত যখন ব্লগ খুব বেশি বড় না হয়ে আকারে ছোট হয় কিংবা সেখানে যদি বেশি বেশি ছবি অ্যাডেড না থেকে থাকে।
ব্লগ পোস্ট আপনাকে :
- অথরিটেটিভ কন্টেন্টের সেট তৈরিতে সাহায্য করে,
- বেটার সার্চ র্যানকিনের জন্য বিভিন্ন ভরসাযোগ্য মাধ্যম থেকে সাইটেশনে সাহায্য করে,
- এক ধরণের ফরম্যাট থেকে আরেক ফরম্যাটে নেওয়া যায় এমন কন্টেন্ট তৈরি করতে সাহায্য করে।
ইনবাউন্ড লিংক প্রোফাইলের জন্য গেস্ট ব্লগিং ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন ধরণের আর্টিকেল ব্লগিং এর অন্তর্গত, যেমন : রিভিউ, হাউ টু, লিস্ট ইত্যাদি।
ব্লগ পোস্ট লেখার জন্য :
- হেডলাইন টুল ব্যবহার করতে হবে,
- বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট সম্পর্কিত আইডিয়া চেক আউট করতে হবে,
- বেটার এসইও বিল্ডিং এর জন্য লিঙ্ক পোস্ট এবং কন্টেন্ট অপটিমাইজেশন করতে হবে।
২. লং ফর্ম আর্টিকেল :
এটিও এক ধরণের ব্লগিং যা লং ফর্মড হয়ে থাকে। যেমন : মজের ওয়েবসাইট ফরমেশন গাইড, এতে সতেরো হাজারের উপরে ওয়ার্ড আছে। একটি ডাটাতে দেখা গেছে যে, সাধারণত ইউজাররা লং ফর্মের আর্টিকেল সোশাল মিডিয়াগুলোতে শেয়ার করে থাকে। এর কারণে আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বুদ্ধি পায়।
লং ফর্ম আর্টিকেল তৈরি করার জন্য যথেষ্ঠ রিসার্চের প্রয়োজন পড়ে। যেমন : যদি বিভিন্ন টপিকের উপর “আলটিমেট গাইড” পাবলিশ করা হয়, তাহলে সেগুলোর কতগুলো চ্যাপ্টার থাকতে পারে( যাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ইউআরএল আছে) । অর্থাৎ এক্ষেত্রে গাইডটির সার্চ রেজাল্ট গুলোতে আসার সম্ভবনা বেড়ে যায়।
এক্ষেত্রে আমরা দুই ধরণের উপায় কাজে লাগাতে পারি, এক হতে পারে, আপনি আপনার নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রির এক্সপারটাইজ দ্বারা ইন ডেপথ এবং রিসার্চফুল লং ফর্ম কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন। আরেক হতে পারে যে, আশেপাশে থাকা বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট চেক আউট করে আরো বেটার এবং রিসোর্সফুল নতুন কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন।
৩. অরিজিনাল রিসার্চ :
এটি এক ধরণের পপুলার কন্টেন্ট ফরম্যাট। এটি ইন বাউন্ড লিঙ্ক পাওয়ার অন্যতম উপায় এবং এটি তখনই সম্ভব যখন আপনার ক্রিয়েশনকে সাইটেড করা হয়। তবে ইন ডেপথ রিসার্চ সময় সাপেক্ষ এবং একইসাথে কস্টলি। প্রসেসটি স্পিড আপ করার জন্য WTForms ব্যবহার করে সার্ভে তৈরি করতে হবে, তারপর রেজাল্ট যাতে চার্ট আকারে ভিজুআলাইজড হয়, সেই জন্য একটি বিল্ড ইন ড্যাশবোড তৈরি করতে হবে।
৪. ভিডিও :
মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারকারীদের কাছে এটি সবচেয়ে পপুলার কন্টেন্ট ফরম্যাট হিসেবে পরিচিত। এটি অনলাইনের অ্যাটেনশন গেটার হিসেবে কাজ করে। গুগলের একটি ডাটা থেকে এটা প্রমাণিত যে, ভিডিও ৪০% মিলেনিআল ইউজারের কাছে ট্রাস্টেড সোর্স হিসেবে কাজ করে।
বিজনেস রেভেনিউতে ভিডিও এক ধরণের কন্টেন্ট ফরম্যাট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডিজিটাল মার্কেটিঙে ভিডিওর ব্যবহার ৬৬% লিড বাড়িয়ে দেয় নন ভিডিও ইউজারদের চেয়ে। ভিডিও মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিঙের সেলস বাড়িয়ে দেয়। বিজনেসে যেভাবে আমরা ভিডিও ব্যবহার করতে পারি :
- বিজনেস ইনটরোডাকশনের জন্য এক্সপ্লেইনার ভিডিও ব্যবহার করতে পারি
- প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের ফিচার শোকেসের জন্য ভিডিও তৈরি করা যেতে পারে
- প্রোডাক্ট ব্যবহার করার বিভিন্ন ধাপ বর্ননা করার জন্য এটির ওপর একটি ভিডিও শুট করা যেতে পারে।
ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির জন্য কয়েকটি সাজেশন :
- ইউটিউব স্টুডিও অ্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই স্মার্ট ফোনে ভিডিও শুট করে আপলোড করা যায়
- ভিডিও ক্রিয়েশন টুল ব্যবহার করা
- লাইভ ভিডিও শুট করা যেতে পারে।
- শেষ অপশন :
- ভালো ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হবে
- লাইভ শুটের আগে সবাইকে জানানো এবং সকলকে ভিডিও দেখতে, সাবস্কাইব করতে উৎসাহী করা।
৫. ইনফোগ্রাফি :
এটি সবথেকে বেশি শেয়ারড কন্টেন্টের মধ্যে একটি। আকর্ষণীয় ইনফোগ্রাফি তৈরি করতে সঠিক গ্রাফিক এলিমেন্ট, ইন্টারেস্টিং এবং ভরসাযোগ্য ইনফরমেশন প্রয়োজন।
ইনফোগ্রাফির কিছু প্রয়োজনীয় টিপস :
- ব্লগ পোস্ট আউট লাইন একটি ভাল স্টার্টিং পয়েন্ট হিসেবে কাজে লাগে।
- হেডলাইন এবং সাব হেডলাইন ইন্টারেস্টিং হতে হবে
- ক্যানভা, পিকোচার্ট এবং অন্যান্য ভিজুআল কন্টেন্ট মার্কেটিং টুল ব্যবহার করা
৬. ইমেজ :
ইমেজ ইউজারদের রিটেন কন্টেন্ট সমূহ ফেসবুকে বা টুইটারে পোস্ট করতে অনুপ্রাণিত করে থাকে। সারা বিশ্বে প্রতি মিনিটে ১৫,০০০ জিআইএফ মেসেনজারে সেন্ড করা হয়, ৪৬,২০০ পোস্ট ইনস্টাগ্রামে আপলোড করা হয়। ইমেজকে যেভাবে কন্টেন্ট ফরম্যাটে নেয়া যায় :
- ক্যানভা বা স্টেনসিল ব্যবহার করে আপনার ব্লগ পোস্টের কী টেকওয়েকে কোট গ্রাফিকে পরিণত করতে হবে ।
- “Know Your Meme” থেকে একটি শেয়ারেবল এবং পপুলার Meme বাছাই করতে হবে।
- “Google Photos” অ্যাপ ব্যবহার করে স্টিল ফটোর একটা শর্ট অ্যানিমেশন তৈরি করতে হবে।
- “Giphy” থেকে শেয়ারেবল GIF তৈরি করতে হবে।
৭. কেস স্টাডি:
নতুন বিজনেস শুরু করবার জন্য কেস স্টাডি একটি ইফেক্টিভ কন্টেন্ট ফরম্যাট। কেস স্টাডি আপনাকে যেসব ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে :
- আপনি সঠিক কি না সেটি শো করে থাকে।
- নিশ স্পেসিফিক কন্টেন্ট তৈরি করে।
- ট্রাস্ট এবং অথরিটি বিল্ডিং করে থাকে।
- কমপেটিটিভ অ্যাডভানটেজগুলোকে হাইলাইট করে।
৮. হোয়াইট পেপার/ রিপোর্ট:
এই পেপার বা রিপোর্টগুলো বিজনেস ওয়েবসাইট সমূহে অডিয়েন্সদের এনগেজড্ রাখে। ডিজিটাল মার্কেটিং প্রসারিত করতে হোয়াইট পেপার অ্যাডিং একটি বিশাল মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে। টার্গেটেড অডিয়েন্সদের সাহায্য করা হোয়াইট পেপারের মূল উদ্দেশ্য। বেস্ট হোয়াইট পেপার :
- কী ইস্যুগুলোতে ফোকাস করে।
- ইন ডেপথ্ রিসার্চ ব্যবহার করে।
- যেকোনো ক্লেইমকে ভেরিফাইএবল স্ট্যাটিসটিক্স দ্বারা ব্যাক আপ করে থাকে।
- চার্ট, গ্রাফ এবং পুল কোটসমূহ ইনক্লুড করে।
- হোয়াইট পেপারের মাধ্যমে রিডাররা পরবর্তীতে কি করবে সেটি বুঝতে পারে।
৯. ইবুক :
ইবুক লিড ম্যাগনেট হিসেবে কাজ করে এবং কাস্টমারদের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে থাকে। যেমন : Hubspot, এটি তার বিভিন্ন ব্লগ পোস্টে ইবুককে লিড ম্যাগনেট হিসেবে ব্যবহার করে। ইবুক তৈরির জন্য ইন ডেপথ্ ব্লগ পোস্টিং কিংবা লং ফর্মের কন্টেন্টের প্রয়োজন পড়ে।
১০. প্রেজেন্টেশন :
প্রেজেন্টেশন অনলাইন বিজনেস প্রোমোট করতে অত্যন্ত কার্যকরী। স্লাইড শেয়ার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অনলাইন প্রেজেন্টেশন তৈরি করা তুলনামূলকভাবে সহজ। স্লাইড শেয়ারের মাধ্যমে অনলাইন প্রেজেন্টেশন তৈরির জন্য প্রথমে প্রেজেন্টেশন তৈরি করে সেটিকে আপলোড করতে হবে। এরপর একে প্রায় তিনটি কী ওয়ার্ড দ্বারা ট্যাগ করতে হবে যাতে করে কাস্টমাররা প্রেজেন্টেশনটিকে সহজেই খুঁজে পেতে পারেন।
এরপর প্রেজেন্টেশনটিকে লিঙ্কেডিন প্রোফাইলে অ্যাড করতে হবে যাতে করে ইউজারদের কাছে এটি আরো ভিজিবল হয়ে ওঠে। সর্বশেষ ধাপে মার্কেটিং চ্যানেলগুলোতে প্রেজেন্টেশনটিকে প্রোমোট করতে হবে।
১১. ওয়েবিনারস্ :
ওয়েবিনারস্ হল অনলাইন সেমিনার, এটি বিজনেস কন্টেন্ট মার্কেটিং এর একটি ফরম্যাট। ওয়েবিনারসে সাধারণত কিউ/এ সেশন এবং একটি প্রেজেন্টেশন থাকে। এক্সপারটাইজ শো অফের জন্য এগুলো সাহায্য করে। ওয়েবিনারসে প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস সম্পর্কিত বর্ননা অ্যাড করা যায়, এতে করে অনলাইন বিজনেসে ইউজার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
১২. কুইজ এবং পোলস্ :
অডিয়েন্সদের অ্যাটেনশন পেতে এটি একটি কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই অ্যাটেনশন কিভাবে পাওয়া যায়। যখন কোনো বিজনেস ওয়েবসাইটের পোল কোয়েশ্চেনগুলোতে ইউজারেরা অংশগ্রহণ করেন, তখন তারা স্বাভাবিকভাবেই ওয়েবসাইটে এনগেজড্ হয়ে যান।
১৩. পোডকাস্ট :
পোডকাস্ট লিসেনারের সংখ্যা ক্রমাগত বুদ্ধি পাচ্ছে। তাই বর্তমানে এটি গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট ফরম্যাট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি অডিয়েন্স এনগেজমেন্টে সহায়ক।
১৪. চেকলিস্ট :
চেকলিস্ট সবচেয়ে সহজ এবং পপুলার কন্টেন্ট ফরম্যাটগুলোর মধ্যে একটি। এটি ব্লগ পোস্টের মতো কী পয়েন্টগুলো পুল আউট করে তৈরী করা যায়। ওয়ার্ক শীট, টিপ শীট এবং চিট শীট এই ধরণের কন্টেন্ট ফরম্যাটের অন্তর্গত । চিট শীটগুলো পিডিএফ ফাইল হিসেবে এক্সপোর্ট করা যায়।
১৫. ইমেইল নিউজলেটার :
এটি সাধারণত অন্য ফরম্যাটে তৈরি করা কন্টেন্ট হাইলাইট করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ইমেইল নিউজলেটার ডিজাইনিং ডিজিটাল মার্কেটিং প্রসারিত করতে সাহায্য করে।
কন্টেন্ট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিকে আরো প্রসারিত এবং শক্তিশালী করে তুলতে কন্টেন্ট প্রমোট করা প্রয়োজন।